মেঘালয়ের শীলং

দেশের পর্যটন শিল্পের প্রতি ভালোবাসা রেখেই আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরছি শীলং ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা। আমরা যারা কিছু অবসর সময় পেলেই ঘুরতে বের হতে পছন্দ করি তাদের জন্য বাজেট অনেক বড় একটা ফ্যাক্ট। তাই অনেকদিন ধরে খোজাখুজি করে চলে গেলাম মেঘালয়ের শীলং এ।
বাজেট কমানোর জন্য আমরা ৩ জন ছিলাম।
♪১ম দিন
যথারীতি ভিসা, আগেরদিন ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে সকাল ৯টায় তামাবিল-ডাওকি বর্ডার এ পৌছে গেলাম। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, বিজিবি পার হয়ে চলে গেলাম ইন্ডিয়ায়। ২০মিনিটেই সব কিছু শেষ করে এবার ডাওকি বর্ডার থেকে আসল ট্যুর শুরু করলাম ১০.২০ বাংলা সময়।
ডাওকি বর্ডার থেকেই ৩জন একটা গাড়ি ঠিক করলাম শীলং পর্যন্ত, রাস্তায় ডাওকি গ্রাম, ডাওকি ব্রীজ (যেটা আমাদের জাফলং থেকে দেখা যায়), ওয়াংক্রাং ফলস, বরহিলস ফলস, লিভিং রুট ব্রীজ, মাওলীলং গ্রাম, রাস্তার মধ্যে দুইটা যায়গা যেখান থেকে মেঘ ছোঁয়া যায় এবং একটা ভিওপয়েন্ট, তারপর শীলং ঢুকার আগের এলিফ্যান্ট ফলস দেখিয়ে নিয়ে যাবে।৷
খরচ নিলো ২১০০রুপি
দুপুরে খেলাম মাওলীলং গ্রামে তিনজন ৩৫০ (সাথে ড্রাইভারকেও খাইয়ে দিলাম, উনাদের অর্ধেক দাম খাবারে)
তারপর সব দেখে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে পৌঁছে গেলাম শীলং শহরের পুলিশ বাজারে, এখানেই হোটেল ঠিক করলাম বাসস্ট্যান্ড এর পাশে এলজিন হোটেল, ৩ জনের ৬০০ টাকা ডাবল বেডের রুম।
রাতে ভেজথালি খেলাম ৩০০টাকায়।
♪ ২য় দিন
বাসস্ট্যান্ড আর হোটেলের পাশেই ছিলো মেঘালয় ট্যুরিজম এর অফিস, চলে গেলাম সকাল ৭.৪৫ এ চেরাপুঞ্জির প্যাকেজ নিলাম ৩৫০ করে ৩ জন। আসলে প্যাকেজ আগেরদিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে নিতে হয় আমরা জানতাম না, আপনারা অবশ্যই আগেরদিনই করে রাখবেন। তারা ৮টা প্লেস রামকৃষ্ণ মিশন, মাওসুমেই কেভ, সেভেন সিস্টার্স ফলস, বাংলাদেশ ভিওপয়েন্ট, দুয়ানসিং সান সেট ভিও পয়েন্ট, ইকোপার্ক, নোকালিকাই ফলস আরো একটা ফলস দেখিয়ে ৫.৩০ এ এনে আবার পুলিশবাজারে নামিয়ে দিলো। তারপর আমরা চলে গেলাম গোয়াহাটি জনপ্রতি ২০০ করে ভাড়া দিয়ে সুমো দিয়ে। গোয়াহাটি পল্টনবাজারে হোটেল নিলাম রাত ১০টায় ১০০০ টাকা দিয়ে।
♪৩য় দিন
সকাল সকাল চলে গেলাম কামাক্ষা মন্দিরে, ৫০১ রুপি দিয়ে ভিআইপি টিকেট করে লোকাল বাসে তারাতারি চলে এলাম মানসপুত্র (ব্রহ্মপুত্র) নদী ঘুরতে ( দুপুরে খেলাম মন্দিরেই)। এইখানে জাহাজে করে ঘুরে ৫টায় আবার পল্টন বাজারে চলে এলাম লোকাল বাসে করে। এখান থেকে ২০০ করে জনপ্রতি সুমো করে আবার শীলং পুলিশবাজার। মানুষবেশি হওয়ায় আর এতো সহজে হোটেল পেলাম না। উঠলাম লিটল ক্যাসেল এ সিঙ্গেল রুম ১৮০০টাকায়। রাতে খেলাম রাস্তায় স্ট্রীটকার এ এগ ফ্রাইড রাইস চিকেন দিয়ে ৪০টাকা নিলো।
♪৪র্থ দিন
একটু ভালো করে ঘুমালাম পুরোরাত্র, হোটেল থেকে এক্সট্রা কম্বল আর বালিশ নিয়েছিলাম, ঘুমালাম ফ্লোরিং করে, ঘুম ভালোই হয়েছিলো। সকাল ১০টায় বড়বাজার আর বিশাল এ কিছু শপিং করে ১২ টায় হোটেল চেকআউট করে ট্যাক্সি ঠিক করলাম ডাওকি বর্ডার এর জন্য সেনাংপেডাং ঘুরিয়ে নিয়ে যাবে। ১৫০০ টাকায় ঠিক করলাম। বর্ডার ৫টায় বন্ধ হয়, হাতে ১০মিনিট ছিলো আমরা বর্ডারে পৌছাই।
এখানে আসার সময় কোনঝামেলা ছাড়াই বাংলাদেশে পৌঁছে গেলাম। 🇧🇩🇧🇩🇧🇩
আমাদের জনপ্রতি শপিং ছাড়া টোটাল খরচ হয়েছিলো ৩৭০০ রুপি। আমরা সাথে সিকিউরিটি হিসেবে নিয়েছিলাম জনপ্রতি ৫০০০ রুপি করে।
√ ফরেইনার হিসেবে হোটেল পেতে একটু কষ্ট হবে, কারণ হোটেলে ফরেইনারদের জন্য আলাদা ফর্ম লাগে, অনলাইন এন্ট্রি করতে হয় তাদের, তাই তারা এতো ভেজাল এ যেতে চায় না। শীলং গোয়াহাটি সব জায়গায়ই এমন।
√ শীলং এ চেষ্টা করবেন রাস্তায় খাওয়া দাওয়া করতে, মানসম্মত ভালোমানের খাবার কিন্তু হোটেলের তুলনায় খরচ ৩ ভাগের ১ ভাগ।
♪ পুরো ট্যুরের কিছুকিছু জায়গা নিয়ে একটা ভিডিও বানিয়েছি, চাইলে দেখতে পারেন। লিংকঃ https://youtu.be/qlotTNADJNg
বিশ্বের যেখানেই যান বাঙালি/বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিবেন বুকফুলিয়ে, এখান পরিচয় লুকানোর কিছু নেই। ভারত নিজেও আপনাকে তোষামদ করবে কারণ তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আমাদের কাছ থেকেই পায়।
শীলং ঘুরতে গিয়ে বুঝেছি আমাদের পর্যটন শীল্পের অবস্থা কতটা নাজুক, সরকারের উচিত পর্যটন শীল্পের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া।
♪ অবশ্যই যেখানে যান সেজায়গার ঐতিহ্যকে সম্মান করবেন, কখনোই ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলবেন না, আশেপাশের ডাস্টবিনে ফেলবেন। নিজের দ্বারা যাতে কোনজায়গা অপরিষ্কার না হয় সেদিকে সুদৃষ্টি রাখবেন। ♪
Image may contain: outdoor, nature and waterImage may contain: mountain, sky, cloud, nature and outdoorImage may contain: mountain, sky, outdoor and natureImage may contain: tree, plant, sky, outdoor and natureImage may contain: sky, cloud, outdoor, nature and water

Comments