অফ সিজনে ভিন্ন পথে নিঝুম দ্বীপে বেড়িয়ে আসা
হ্যা, আমি এই বর্ষায় নিঝুম দ্বীপ দেখতে যাওয়ার কথা বলছি তাও আবার সমুদ্র পথে। এ পথে যাত্রার সময় ভিন্ন ধারার অনুভূতি পাওয়া যায় আর সেই সাথে প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার ভাল উপায়। যদিও আমাদের বেশীরভাগ দর্শনার্থীদের সী বিচ থেকে সমুদ্র দেখা হয়ে থাকে আর বড়জোর সেন্টমার্টিন যাবার পথে সমুদ্র ভ্রমনের সৌভাগ্য হয়। তবে এ যাত্রাপথেও সমুদ্রের মাঝ দিয়ে ভ্রমন করতে পারবেন। পথিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য উঠানামার দৃশ্য দেখতে পাবেন।
আমরা চট্টগ্রাম গিয়ে নিউমার্কেট হয়ে সদরঘাট থেকে এমভি বার আউলিয়া সী ট্রাকে করে যাত্রা শুরু করি। সকাল ৯টায় প্রতিদিন এই ঘাট থেকে সী ট্রাক ছেড়ে যায়। ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্ণফুলি নদীর পাশে চট্টগ্রাম বন্দর দেখি। এরপর নেভাল একাডেমী ও মেরিন একাডেমী ও কাফকো হয়ে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করি। তবে ভুলেও সাবমেরিন দেখলে ছবি তুলা থেকে বিরত থাকবেন। সেখান থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতও দেখা যায়। বিশাল বড় বড় জাহাজ গুলো এখানে নোঙ্গর করা থাকে আর এগুলো থেকে অন্যান্য ছোট জাহাজে পণ্য ওঠানামা করা হয়। এর মাঝেই মৃদু ঢেউয়ে সী ট্রাকটি হেলতে দুলতে এগিয়ে চলে। তার কিছুক্ষন পর চারপাশে আর কিছুই দেখা যায়না পানি ছাড়া। এভাবেই চলার পর একটি দ্বীপের দেখা পাই দূর থেকে যার নাম সন্দীপ। শেষ পর্যন্ত ৩৫৫টাকা খরচায় সমুদ্র থেকে মেঘনা নদী হয়ে হাতিয়া পৌছাই বিকাল ৪টায়।
হাতিয়ার আফাজিয়া ঘাটে নেমে মটরসাইকেল ভাড়া করে নিঝুম দ্বীপের ঘাটে এসে পৌছাই। এই রাস্তার দুপাশের সারিবদ্ব সবুজ গাছের মাঝ দিয়ে যাত্রাটিও বেশ মোহনীয়। সময় লাগে প্রায় দেড় ঘন্টা। ভাড়া জনপ্রতি ২০০-২৫০টাকা। তারপর ঘাট পার হই স্পীডবোটে চড়ে, সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট। সেখানে নেমে আবার মোটরসাইকেল নিয়ে আধা ঘন্টার মাঝেই নিঝুম দ্বীপের শেষপ্রান্ত নামাপাড়া বাজারে চলে আসি। এখানেই একটি হোটেলে রাত্রিযাপন করি। অফ সিজন হওয়াতে হোটেল ভাড়া খুবই কম, চারজনের এক রুম ৮শ টাকায় পাওয়া যায়। চাইলে বাহিরে বনে অথবা সমুদ্র সৈকতেও তাবু টানিয়ে থাকতে পারবেন। রাতে বীচে সাগরের গর্জন শোনা সত্যি অসাধারন অনুভূতি।
সকাল হতেই দেখি হরিণ বাজারে ঘোরাঘুরি করছে। পরে জানতে পেলাম এগুলো বনবিভাগের পালিত হরিণ। কিছু খাবার দিলে আপনার সাথেও ভাব জমাবে বেশ। বনবিভাগের অফিস পার হয়ে একটি কাঠের ব্রীজ রয়েছে। এটি পার হয়ে উপকূলীয় বন দেখতে পারবেন। নামাপাড়া বাজার থেবে ২-৩মিনিট হেটে সমুদ্র সৈকত দেখতে পাবেন। আর ১কিলোমিটার দূরে কেওড়া বন, যেখানে গেলে বনের ভেতর হরিণদের ছুটোছুটি দেখতে পাবেন।
এগুলো দেখে ফেরার পথে নিঝুম দ্বীপের ঘাট পার হয়ে তমরুদ্দি ঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি, যেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে। একটি ১২টায় আরেকটি দেড়টায়। লঞ্চ ছাড়ার আধা ঘন্টা পরেই মনপুরা এসে অনেকক্ষন যাত্রাবিরতি দিয়ে বিভিন্ন ঘাট হয়ে ভোর পাচটায় ঢাকায় পৌছাই।
সব মিলিয়ে তিন রাত দুই দিনের ভ্রমন আমাদের অসাধারণ কেটেছে আর খরচ হয়েছে জনপ্রতি ২৯১০টাকা(যাওয়া আসা আর থাকা)। খাবার আপনাদের ইচ্ছানুযায়ী খেয়ে নিতে পারবেন। তবে নিঝুমে যেহেতু অফ সিজন তাই পছন্দসই কোন খাবার খেতে চাইলে হোটেলে আগে থেকেই জানিয়ে রাখবেন।
অবশ্যই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সচেষ্ট রাখতে সচেতন থাকবেন এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
Comments
Post a Comment